সাজ্জাদ বিপ্লব
কবি। সম্পাদক। গবেষক। প্রকাশক। সংগঠক। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রাহক। জন্মশহর বগুড়ায় গড়ে তুলেছেন বই ও পত্র-পত্রিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র : পুণ্ড্রনগর লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি।
কবি। সম্পাদক। গবেষক। প্রকাশক। সংগঠক। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রাহক। জন্মশহর বগুড়ায় গড়ে তুলেছেন বই ও পত্র-পত্রিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র : পুণ্ড্রনগর লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি।
১.রাজার দেশ রানির দেশ
………..
এ শুধু রাজার দেশ! এ শুধু রানির দেশ!
ঝড় ঝঞ্ঝা ঢেউ ঘূর্ণি মৃত্যু
অতঃপর ঘাটে নৌকো
মাঝি নয়,
মাল্লা নয়,
যাবতীয় কৃতিত্ব রাজার
যাবতীয় কৃতিত্ব রানির।
এ শুধু রাজার দেশ! এ শুধু রানির দেশ!
রোদে দগ্ধ বানে কাদা
অতঃপর সোনালি শস্যের দিন
চাষি নয়,
মুটে নয়,
নবান্নে গাইতে হবে রানির বন্দনা
নবান্নে শোনাতে হবে রাজার স্তুতি।
এ শুধু রাজার দেশ! এ শুধু রানির দেশ!
এখানে যুবক ভালোবাসে তার যুবতীকে
এখানে যুবতী ভালোবাসে যুবককে তার
জেল জ্বালা বিরহ মিলন
অতঃপর উঠোনে শিশুর হাসি
গায়ে তার ভালোবাসারঙা জামা
যুবতীর নয়-
যুবকেরও নয়
আঁতুড়ঘরে গাইতে হবে বন্ধ্যা রানির বন্দনা
উঠোনে আঁকতে হবে আঁটকুড় রাজার মুখ
এ শুধু রাজার দেশ! এ শুধু রানির দেশ!
২.আয়নাঘর
………..
আমি কবি; প্রেমিক হওয়া ছাড়া আর কোনো যোগ্যতা ছিল না;
বিদ্রোহী কবির ‘ভাঙার গান’ শুনে লাফিয়ে উঠি বারবার
কিন্তু তার মতো করে লৌহকপাটে ঢোকার ঝুঁকি নিতে পারি না।
আল মাহমুদের মতো জেলখানায় বসে রচতে পারবো না
বেদনা ও বীর্যকে একাকার করে ‘জেলগেটে দেখা’
কিংবা ‘কবি ও কালো বিড়ালিনী’ সিরিজের কবিতা;
অথচ বিরহের আয়নাঘরে বন্দি আমি দিনের পর দিন;
মাসের পর মাস; ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে পারি না,
দুঃখের মেজর বেনজির এসে জাগিয়ে রাখে
হাজারো উদ্ভট সওয়ালে যার উত্তর আমি কেন
ভাতের হোটেলের সর্বজান্তা ম্যানেজার জিয়াউলও জানেন না।
কখনো মনে হয় আমার হাতদুটি পিঠমোড়া করে
বাঁধা রয়েছে পেছনে, আমি চোখ বন্ধ করি
অমনি দুঃস্বপ্নের সিপাহী এসে যম টুপি পরিয়ে দেয়
আমার মাথায়, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে!
তুমি তো ম্যালেশিয়া প্রবাসী শেখ সেলিমকে চেনো,
আমি তার কণ্ঠ ধার নিয়ে চিৎকার করে কাকুতি
মিনতি জানাতে চাইলে,– চুপ শালা!
নইলে ক্রশ ফায়ারে দিয়ে দিবো!
যমালয়ের অন্যতম কর্তা হারুন ফারুকীর ধমক
খেয়ে বোবার বেদনায় ছটফট করতে থাকি আমি;
একজন পুরুষের পুরুষত্ব চলে গেলে তুমিই বলো কী
আর থাকে তার! হর দুপুরে হতাশার ইলেক্ট্রিক শক
খেয়ে খেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে আমার পুরুষাঙ্গ!
হাতকড়া পরা হাত দিতেই ভেঙে পড়ে মন; এখান
থেকে ভাগ্যক্রমে যদি কোনোদিন ছাড়াও পাই
রাষ্ট্রদূত মারুফের মতো, জানি না, সেদিন কোনো নারীর
সঙ্গে বৈধ বিছানাতেও শোয়ার সাহস পাবো কি না;
আর যদি মারা পড়ি হতাশার এনকাউন্টারে, অথবা
আমার স্বপ্নের পেট চিরে ইলিয়াস আলী বানিয়ে
ডুবিয়ে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যায় কিংবা পতেঙ্গা বীচে,
হয়তো-বা আমার নিকটজনেরাও কোনোদিন
জানতে পারবে না নির্দোষ প্রেমের অন্তিম পরিণতির কথা।
ধর্ম কিংবা আইন ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কিউপিডের তীর;
আমার তো অন্য কাউকেও ভালোবাসার অধিকার আছে,
তাই না? কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই
ভালোবাসিনি; কোনো হীন লোভের সাথে জড়িত ছিলাম না
কোনোদিন; আমার বিরুদ্ধে যারা সিমির সাথে গোপন
পরকীয়ার মেসেজ পাঠিয়েছিল তোমার হোয়াটসঅ্যাপে,
তারা কেন এমনটি করেছিল- তা আমি আজও বুঝি না।
তুমিই বলো, শুধু দূরাগত সন্দেহের ভিত্তিতে কিংবা
তোমার সাঙ্গপাঙ্গদের সর্বগ্রাসী লিপ্সাকে জিতিয়ে দিতে
এমন নির্যাতন কি একজন প্রেমিকের প্রাপ্য হতে পারে
বেহুলার অনিচ্ছুক নৃত্যের দামে অর্জিত এই বঙ্গদেশে?
৩. সাঈদ, তোমায় স্যালুট
……….
বিদেশ চালায় প্রেমের গুলি
ফেলানী হয় লাশ
নিজ উঠোনে রাজার গুলি
সাঈদ হারায় শ্বাস।
সাঈদ কিন্তু লুটেরা নয়
নয় সে ছিনতাইকারী
চায়নি বসতে সিংহাসনে
পাতেনি ফোনে আঁড়ি।
রাজার পথে দেয়নি কাঁটা
চায়নি লুটের ভাগ
তবু কেন সে টার্গেট হলো
তার ওপর কী রাগ?
মেধাবী সাঈদ বেরোবিতে
ইংরেজিতে পড়ে
বিসিএস-এ নাম লেখাবে
চাকরি আসবে ঘরে।
তবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ!
কী অপরাধ তার?
অন্যায় কোটা বাতিল চায়
তাই সে রাজাকার!
হাজার লোকের উপস্থিতি
ভিডিও ক্যামেরা অন
তবু গুলি চালায় পুলিশ
রাজার অনুগ যম।
পুলিশ কেন হলো উইলিং
এক্সিউকিশনার?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজে
সোসিয়লোজির স্যার।
রাজা তুমি মূর্খ বড়ো
পুষেও হাজার জন
পণ্ডিত পুলিশ বুদ্ধিজীবী
উপদেষ্টাগণ।
এত কথা বললে,– দিলে
এত এত ভাষণ
জানলে নাকো কোন শক্তিতে
শক্ত রাজার আসন।
জনগণই ক্ষমতার উৎস
অন্য কেহ নয়
তাদের স্বার্থ নিয়ে তুমি
করলে নয় ও ছয়!
বহু আগেই বলেছেন কবি
স্বজন সদাই শ্রেয়
ঘরের কলস ফেলে তুমি
ঘাটকে করলে প্রিয়?
ভুলে গেলে বায়ান্নকে
ভুললে একাত্তর
নূর হোসেনকে মুছে ফেলে
রচলে মোহের ঘোর।
আসাদ বরকত নূর সাঈদ
কেউই একজন নয়
জনগণের কণ্ঠ তারা
তাই অকুতোভয়।
ইতিহাসে তারাই উজ্জ্বল
সোনার মুকুটধারী
ওদের হত্যা করে রাজা–
তোমরা স্বৈরাচারী।
আবু সাঈদ টার্নিং পয়েন্ট
মোহনামাখা নাম
তার হত্যায় কোটার মিছিল
গণ অভুত্থান।
সাঈদ এখন বিশ্বনায়ক
ন্যায়ের পক্ষের নাম
কবির হাতে কবিতা সে
শিল্পীর কণ্ঠে গান।
তার মৃত্যু প্রাণ জোগায়
আধমরাদের গানে
পদ্মার মৃত্যু মেঘনা হয়ে
ছুটে দ্বিগুণ প্রাণে।
মুক্ত স্বদেশ মুক্ত উঠোন,
মুক্ত কণ্ঠস্বর
সাঈদ, তোমায় স্যালুট জানাই
নেই কোনো আর ডর !
৪.ভিস্তিওয়ালা মুগ্ধ
…………
পানি লাগবে পানি! আমি এক ভিস্তিওয়ালা;
আমাকে চিনতে পারছেন না? আমার নাম মুগ্ধ।
একদিন সম্রাট হুমায়ুনকে বাঁচিয়েছিলাম আমি।
অবশ্য তখন আমাকে আলাদা নামে ডাকা হতো ;
সে গল্প নাহয় আরেকদিন হবে।
এখন শুধু জরুরি পানি দেওয়া।
পানি লাগলে বলুন! পানি!
আমার কাছে অঢেল পানি আছে;
বুড়িগঙ্গার কালো রঙের পানি নয়,
হাতির ঝিলের অপেয় তরল নয়,
গন্ধযুক্ত সাপ্লাইয়ের পানিও নয়
লোভে দূষিত ওয়াসার,
চোখের ফিল্টারে পরিশোধিত—
আমার কৈশোর হৃদয়ের ভালোবাসা নিংড়ানো এই পানি;
মাফ করবেন, আমার হাতে কিন্তু কোনো গেলাস নেই,
শুধু বোতল—একজন—এক বোতল;
যারা ন্যায্য ঘাম ঝরিয়ে তষ্ণার্ত,
যারা ছটফট করছেন বিদ্ধ হয়ে ঘরের শত্রুর বুলেটে,
এই পানি কেবল তাদের জন্য;
আমাদের প্রথম সাক্ষাতের দিন–
আমি পান করাবো তাকে,
যমুনা থেকে অনেক দূরে আমাদের প্রথম ভ্রমণের দিন–
আমি পান করাবো তাকে;
আমাদের মধ্যবর্তী বিচ্ছেদ শুরুর দিন–
আমি নিজহাতে পান করাবো তাকে,
এইসব ভেবে রিজার্ভ রেখেছিলাম এই পানি;
রিজার্ভের ভাবনা শিকেয় তুলে রেখে
আজ নিজের হাতে বিতরণ করছি সেই পানি!
টাকা দেওয়া লাগবে না ভাই,
অন্যকোনো বিনিময়ও নয় বোন!
টুকে রাখা হবে না কোনো হিসাবও,
শুধু আওয়াজ দিন– আওয়াজ!
যদি কথা না বের হয় গলা দিয়ে,
যদি মুখ চেপে ধরে দানবের থাবা,
শুধু একবার ইশারা করেন;
টীয়ার গ্যাস,
বুলেট,
হেলিকপ্টার থেকে ছড়ানো মৃত্যুবৃষ্টি
সবকিছু উপেক্ষা করে ( উকোরে )
আমি নিজহাতে পৌঁছায়ে দেবো
প্রাণ নিংড়ানো এই পানি! আর কারো পানি লাগবে— পানি!
৫. কালের কণ্ঠ
………..
সিরাজ আবার সিংহাসনে
মীরজাফরের ফোঁসফাঁস
কোন্ পক্ষ নেবে তুমি
উলটে দ্যাখো ইতিহাস!
ক্লাইভ কেন থাকবে বসে
হাতে নিয়ে বুলেট বোম?
মুরগি নিয়ে ঝগড়া করো
বুদ্ধি তোমার এতই কম!
জোর যার মুল্লুক তার
এটাই সত্য চিরন্তন
বাঘ খাবে না হরিণ শিশু
এমন ভাবে বোকার মন।
কেউ হবে না বন্ধু তোমার
সিংহ কিংবা চিতাবাঘ
তুমি তোমার বন্ধু হলে
সেটাই হবে আসল কাজ।
এইবার হও দূরদর্শী
মনকে মানাও প্রলোভের
সামনে সুদিন দীর্ঘ হবে
লাগাম টানলে সংক্ষোভের।
বুঝতে শেখো উসকানি কি
কোথায় আছে উৎসমূল
কখন কোনটি সময়ের মোড়
চিনতে যেন হয় না ভুল।
স্বাধীন প্রাণে ঐক্য গড়ো
জ্ঞানের চর্চা বাড়াও ভাই
ষোলো কোটি অনেক শক্তি
ভুল করবে তো কিছুই নাই!
——–০০০——
Leave a Comment